BD Cricket update
শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তায় এসে বিষম খাওয়ার মতো অবস্থা। বিশ্বকাপ চলছে না তো! স্টেডিয়ামে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা দর্শকদের সারি চলে গেছে বহুদূর। রাস্তায় আর ফুটপাতেও লাল-সবুজে আবৃত মানুষের ঢল। বাজছে বাঁশি, উড়ছে পতাকা। হালফিল সময়ের চেনা একটা দৃশ্য না থাকলে এমন সাজ সাজ আবহেও ঘাটতি থেকে যেত। খেলা দেখতে আসা দর্শক এবং খেলা না দেখে স্টেডিয়ামের বাইরে থেকেই উৎসবের মৌতাত নিয়ে ফেরা মানুষদের বিচিত্র সেলফিভঙ্গি সেটুকু অসম্পূর্ণতাও রাখল না। অথচ কালকের টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি ছিল সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, মাত্র এক দিন আগেই ওয়ানডে সিরিজে যারা ধবলধোলাই হয়েছে বিনা প্রতিরোধে। এ সেই জিম্বাবুয়ে, যাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের স্নায়ুচাপে ভোগা এখন ইতিহাস। জয় অবধারিত ধরে নিয়ে এ ম্যাচ বাড়তি কিছু পাওয়ার উপলক্ষে পরিণত হয়েছে অনেক আগেই। কালও শেষ দৃশ্যটা একই রকম। ১৪ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ দল।তবে ছুটির দিনে আরেকটি জয়োৎসব দেখার প্রস্তুতি নিয়ে আসা দর্শকদের কিছুটা হলেও শঙ্কা ‘উপহার’ দিতে পেরেছে জিম্বাবুয়ে দল। হ্যাঁ, টানা একপেশে ক্রিকেট দেখতে দেখতে জয়ের আগে সামান্য উত্তেজনার রোমাঞ্চ উপহারের মতোই লাগল। সম্ভাবনার পাল্লাটা যদি ক্ষণিকের জন্যও এদিক-ওদিক সমানভাবে না দুলে, তাহলে আর ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা কেন? জয়ের আগে ওইটুকু রোমাঞ্চ জিম্বাবুয়েরই দেওয়া ‘উপহার’, নাকি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের বিশুদ্ধ ব্যাটিংয়ের অভাবজনিত, সেটা নিয়ে অবশ্য আলোচনা হতেই পারে। ম্যাচ শেষে মাশরাফি বিন মুর্তজা কিন্তু দ্বিতীয়টার কথাই বললেন, ‘প্রথম ৫ ওভারে ৪০-এর বেশি রান হয়ে যাওয়ার পরও তাড়াহুড়ার প্রয়োজন ছিল না। সঠিক ব্যাটিংটা আমাদের আরও ভালো করে রপ্ত করতে হবে।’ অধিনায়কের এই অতৃপ্তি ওয়ানডে সিরিজ থেকেই। কালকের মতো তিন ওয়ানডে জয়েও মিশে ছিল আরও ভালো ব্যাটিং করতে না পারার অতৃপ্তি।জিম্বাবুয়ের ১৩১ রান বাংলাদেশকে কোনো চ্যালেঞ্জ জানাতে পারার কথা নয়। কিন্তু সফরে কালই প্রথম এলটন চিগুম্বুরার দল কিছুটা মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইল। ৮০ রানে বাংলাদেশের ৫ উইকেট ফেলে দিয়ে ছড়াল মৃদু শঙ্কাও। কিন্তু জয়ের স্রোতে ভাসতে থাকা বাংলাদেশ যে এখন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি রাখে! লিটন দাসের সঙ্গে ষষ্ঠ এবং মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে সপ্তম উইকেট জুটিতে সেই শক্তির প্রকাশটা এদিন হলো মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। তবে ১৮তম ওভারে পেসার লুক জঙ্গুয়ের মাথার ওপর দিয়ে মারা ছক্কায় জয়ের ক্যানভাসে তুলির শেষ আঁচড়টা দিয়েছেন মাশরাফিই।প্রথম ওয়ানডেতে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি, শেষ ম্যাচে মুস্তাফিজুর রহমানের ৫ উইকেট এবং শেষ দুই ওয়ানডেতে হঠাৎ দলে আসা ইমরুল কায়েসের দুটি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসই এই সিরিজে আলো কেড়েছে বেশি। তবে কালকের পর মাশরাফির কথাটুকু না বললেই নয়। বল হাতে ডেঙ্গু-পরবর্তী দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জানান দিচ্ছেন প্রতি ম্যাচেই। কাল তো ৩ ওভারের প্রথম স্পেলে ৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের শুরুটাই দিয়েছিলেন কাঁপিয়ে! সে কাঁপন থামেনি শেষ পর্যন্তও।ব্যাটসম্যান মাশরাফির পরিবর্তনটাও চোখে পড়ার মতো। কিছুদিন আগেও পেস বোলিংয়ের সামনে তাঁর অদ্ভুত ভঙ্গির ব্যাটিং হাস্যরস জোগাত। কখনো পেছনে গিয়ে, কখনো সামনে এগিয়ে আগে শরীরটাই যেন বাঁচাতে চাইতেন। ঘরোয়া আড্ডায় মাশরাফি নিজেও সেসব রসিকতা মেনে নিতেন মৌন হাসিতে। সেই মাশরাফিই এখন পেসারদের ওপর চড়াও হয়ে ব্যাট চালাচ্ছেন। জঙ্গুয়েকে ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করার আগের বলেই পুল শটে ফাইন লেগ দিয়ে মারা বাউন্ডারিটা যেন জানিয়ে দিল, জোরে বোলারদের নিয়ে ভয়টা এখন আর নেই।কালকের ম্যাচের ‘হাইলাইটস’ দেখাতে হলে আসবে জুবায়ের হোসেনের বোলিংটাও। ওয়ানডে সিরিজ ড্রেসিংরুমে বসেই কাটিয়ে দেওয়া এই লেগ স্পিনার কালই প্রথম মাঠে নেমে ধাক্কা খেলেন শুরুতেই। অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম ওভারেই দিয়ে দিলেন ১৭ রান। অধিনায়ক তবু আস্থা হারাননি। পরের ওভারে বল নিয়ে জঙ্গুয়ে আর মাদজিভাকে ফিরিয়ে জুবায়ের সে আস্থার প্রতিদান দিলেন ভালোভাবেই।সফরে টানা চতুর্থ হারের পর জিম্বাবুয়ের সান্ত্বনা একটাই—ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ম্যালকম ওয়ালার। টি-টোয়েন্টিতে তো প্রথমই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়ালার ফিফটি পেলেন প্রায় দুই বছর পর। ৩১ বলে ৬৮ রানের ইনিংসে ফিফটি পূর্ণ করেছেন মাত্র ২০ বলে। টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের হয়ে এটাই দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড। এবারের বাংলাদেশ সফর থেকে জিম্বাবুয়ে আর কিছু পায় কি না, সেটা দেখতে
0 comments:
Post a Comment